ad728

অনলাইন বেটিং সাইট: ভেল্কি এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত : ১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছবির ক্যাপশন: ad728

অনলাইন বেটিং সাইট: ভেল্কি এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

 রিয়াজ উদ্দিন

ঢাকা জেলা প্রতিনিধি 

বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া বা বেটিং কার্যক্রম আইনত নিষিদ্ধ হলেও, বাস্তব চিত্র ভিন্নইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের বিস্তারের ফলে এইসব সাইটের কার্যক্রম এখন হাতের মুঠোয়অথচ এসব সাইট পরিচালনাকারীরা আইন ও প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে দিনের পর দিন

 বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালবেলা মেহেরপুর শহরের একটা ছোট চায়ের দোকানে বসে কথা হচ্ছিল ২৬ বছর বয়সী রাজুর সঙ্গেমুখটা শুকনো, চোখে ক্লান্তি, কিন্তু কথা বলার সময় একটা চাপা অনুশোচনার আভা ছড়িয়ে পড়েরাজু বলছিল, "ভাই, শুরুটা হয়েছিল ইউটিউবে একটা ক্রিকেট খেলার লাইভ স্ট্রিমিং দেখতে গিয়েসেখানে একটা লিংকে ক্লিক করে ঢুকে পড়ি ভেল্কি নামে একটা সাইটেওখানে বলছিল যে ৩০০ টাকা জমা দিলেই ৯০০ টাকা বোনাস দিবেশুরুতে জিতেও গেছিলামকিন্তু পরে যা হইছে, তা বললে গা শিউরে উঠে

 রাজু আগে স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতদিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতসেই আয় থেকেই বেটিং শুরু, পরে বন্ধুর কাছ থেকে ধার, এরপর বিকাশে লোনসবমিলিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার বেশি নষ্ট হয়ে যায় এই অনলাইন বেটিং সাইটে"শুরুতে মনে হইছে পয়সা বানানোর শর্টকাট রাস্তাকিন্তু পরে বুঝছি, এইটা একটা ধ্বংসের ফাঁদআমি শুধু টাকাই হারাই নাই, আমার পরিবারের বিশ্বাসও হারাইছিমা এখন আর আগের মতো কথা বলে না, দোকানও ছাইড়া দিছে" – কথাগুলো বলতে বলতে রাজুর গলা ভারী হয়ে আসেরাজুর মতো হাজারো তরুণ আজ এই ডিজিটাল জুয়ার ফাঁদে আটকে পড়ছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ কিংবা কুষ্টিয়া জেলার গ্রাম-শহরে যেখানে ইন্টারনেট সহজলভ্য হলেও সচেতনতা কম

 রাজু জানায়, "মার্কেটে কিছু লোক আছে যারা বেটিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়, কিভাবে খেলতে হবে শেখায়, এমনকি জিতে গেলে টাকা কিভাবে তুলতে হবে তাও বলেতারা হয়ত কারও থেকে কমিশন খায়, কিন্তু আমরাই শেষ পর্যন্ত ডুবে যাই"স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, "অনলাইন বেটিং ব্যাপারটা আমরা বুঝতেও পারছি না ঠিকমতোকিন্তু গত ১-২ বছরে এমন ১৫-২০ জন ছেলের খবর পেয়েছি যারা এটার কারণে সর্বস্ব হারিয়েছেআইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ কোথায়?" রাজুর শেষ কথা ছিল— "ভাই, যদি আপনার লেখাটা পড়ে একটা ছেলেও সাবধান হয়, তাহলে বুঝব, আমি অন্তত কিছু ভাল করলামআমি চাই না আর কেউ আমার মতো ভুল করুক

 উন্মুক্ত ডিজিটাল দরজা দিয়ে বেআইনি প্রবেশ ভেল্কি, সহ নানা আন্তর্জাতিক বেটিং প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ অংশ নিচ্ছেন প্রতিনিয়তVPN কিংবা বিকল্প লিংক ব্যবহার করে তারা সহজেই এসব সাইটে প্রবেশ করছেনটাকা লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ) কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে, যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছেনিয়ন্ত্রণের অভাবে তরুণ সমাজ বিপথে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনিয়ন্ত্রিত বেটিং প্রবণতা তরুণ সমাজকে দ্রুত আসক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেঅনেকে পড়ছেন ঋণের ফাঁদে, নষ্ট হচ্ছে পরিবারিক বন্ধনএদের অনেকে নিজের জীবনধারাও বদলে ফেলেছেন একরকম গেম্বলার মোডেআইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই

 বাংলাদেশে জুয়া আইন (The Public Gambling Act, 1867) অনুযায়ী অনলাইন বেটিং নিষিদ্ধ, তবে এ আইনের প্রয়োগে দেখা যাচ্ছে শৈথিল্যটেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি মাঝে মাঝে কিছু লিংক ব্লক করলেও তা স্থায়ী সমাধান নয়কারণ এসব সাইট দ্রুতই নতুন ঠিকানায় ফিরে আসেকারা রয়েছে পেছনে? অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব অনলাইন বেটিং সাইট পরিচালনায় দেশি-বিদেশি চক্র জড়িতঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে কিছু অসাধু রয়েছেন যারা এসব সাইটে রেজিস্ট্রেশন, টাকা জমা ও উত্তোলন নিয়ে সহায়তা করে থাকেনতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার খবর থাকলেও দৃশ্যত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, “এটি এখন কেবল একটি প্রযুক্তি বিষয় নয়, বরং একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাএদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রযুক্তিগত ও আইনগত পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারেউপসংহার অনলাইন বেটিং এখন আর শুধু জুয়ার মাধ্যম নয়, এটি এক ধরনের সুপরিকল্পিত ডিজিটাল অপরাধ ব্যবস্থায় রূপ নিচ্ছেপ্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরা যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আমাদের আইন ও প্রশাসনেরও সেই গতিতে এগিয়ে যাওয়া জরুরিনা হলে এই ভেল্কি আরও বহু জীবন ও পরিবারকে তছনছ করবেধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেই এই ভেল্কি