ad728

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যে শুল্ক ১০% এ আনা কি আদৌও সম্ভব?


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছবির ক্যাপশন: ad728

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্যে শুল্ক ১০% এ আনা কি আদৌও সম্ভব?
মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন

 
২০২৫ সালের আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পোশাকসহ নানা পণ্যের উপর ২৫% বা তার চেয়েও বেশি পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা একটি যুগান্তকারী ঘটনাকে চিহ্নিত করছে। শুরুতে এই হার ৩৭%-এ পৌঁছেছিল, পরে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় আলোচনার ফলে তা ২০%-এ নেমে আসে, তবে সরকার ও ব্যবসায়ী মহল এটিকে ১৫% এবং আদর্শভাবে ১০%-এ আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি অর্থনীতিশাস্ত্র ও কূটনৈতিক জটিল পরিস্থিতিতে, যেখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একক রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে এ-ধরনের শুল্কের অভিঘাত বহুমাত্রিক এবং গভীর৷ 

২০২৫ সালের মার্কিন শুল্কের পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা: ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি, নির্দিষ্ট দেশসমূহের উচ্চ ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার, চীনের জোগান শ্রৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসা, আমেরিকা ফার্স্ট নীতির অংশ হিসেবে একাধিক দেশে একতরফাভাবে “রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ” আরোপ করে। শুরুতে বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত শুল্ক হার ছিল ৩৭%, পরে একাধিক রাউন্ড আলোচনা, আমদানি জিনিসের চুক্তি এবং মার্কিন চাপ মোকাবিলার মাধ্যমে তা ২০%-এ নেমে এসেছে; ১৫% বা ১০%-এ নামানোর চেষ্টা চলছে।বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, যা দেশের মোট রপ্তানির ৮০% এবং মার্কিন বাজারে বছরে ৮-৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানির সাথে যুক্ত, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে প্রতিযোগিতার বড় চাপের মুখে পড়েছে৷ এই শুল্ক বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সম্মুখীন হয় টেকনিকাল-ব্যারিয়ারে, জিওপলিটিক্স ও শিল্পভিত্তিক নীতিতে বাংলাদেশের ১০% শুল্কে আগ্রহের পেছনের যুক্তি ১. মার্কেট কম্পিটিটিভনেস: ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শুল্ক ২০% হলে সামান্য সুবিধা মেলে, তবে ১০% হলে RMG-এর গ্লোবাল পজিশনিং আরও শক্তিশালী হয়। ২. LDC-র স্বীকৃতি: বাংলাদেশ এখনো LDC (Least Developed Country); WTO, UNCTAD এবং বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশ LDC-র জন্য ৯৭% পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়; যুক্তরাষ্ট্র GSP (Generalized System of Preferences) বাতিল করলেও, বাজেট সমন্বয় করে বিশেষ হার চালু করতে পারে। ৩. Trade Deficit ও Counter Tradeoff: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি ঘাটতি ব্যাপক; এখনও পর্যন্ত সমাধানে আমদানি দ্বিগুন বাড়ানোর উদ্যোগ— গম, তুলা, লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (LNG), সোয়াবিন, কৃষিপণ্য এবং বিমান (Boeing ইত্যাদি) কেনার মধ্য দিয়ে মার্কিন উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনা:  বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান আলোচনা বেশ কয়েকটি স্তরে ভাগ করা যায়: উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি (কমার্স সেক্রেটারি, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার, ফাইন্যান্স অ্যাডভাইজার), ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ (BGMEA, BKMEA), এবং উভয় দেশের ট্রেড অথরিটিদের দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় চলছে একাধিক আলোচনার রাউন্ড । দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কৌশল - ট্যারিফের পরিবর্তে আমেরিকান পণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি: ৭ লাখ টন গম, বৃহৎ পরিমাণ তুলা, বৃহৎ অর্ডারে সোয়াবিন ও LNG, এবং ২৫টি বোয়িং এয়ারক্রাফট আমদানির ব্যাপারে চুক্তি করে বাংলাদেশের টিম মার্কিন আদেশ সম্মান দেখাতে চায়, যাতে শুল্ক ছাড় দেয়ার যুক্তি সহজ হয়। - সংশ্লিষ্ট খাতে মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগ সহজীকরণ, Intellectual Property Protection-এ অগ্রগতি, Public Procurement আনুষ্ঠানিকতা সহজ করা: মার্কিন USTR-এর দীর্ঘ অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশে আইপি ও নির্বিঘ্ন বিনিয়োগে জটিলতা রয়ে গেছে। সংস্কার হলে কিছু নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারে ছাড় পাওয়ার যুক্তি তৈরি হবে। - লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে চাপ: বাংলাদেশের যুক্তি যে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ২০%-এর কম শুল্ক পাচ্ছে— ভু-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য ১০% হার ন্যায্য৷ একই ভাবে, “হাতে হাতে আমেরিকান পণ্য নিব, শুল্ক কমাবেন” approach জনপ্রিয় হচ্ছে ।

ভবিষ্যত করণীয় : আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ আমদানি চুক্তি: আমেরিকান সেচযন্ত্র, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, নিরাপত্তা সামগ্রী, উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্য, প্রযুক্তিপণ্য ইত্যাদিতে নতুন আমদানি চুক্তি করা যেতে পারে।- রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে অর্ধ-উন্মুক্ত প্রচেষ্টা: রাজনীতি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত মার্কিন উদ্বেগ (চীন ও বাইরের ক্ষমতার সঙ্গের ঘনিষ্ঠতা, সংবাদ-নিয়ন্ত্রণ, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া) সরাসরি শুল্ক আলোচনায় না এনেও, কৌশলগত নরম বার্তার মাধ্যমে পরিবেষ্টিত রাখতে হবে - এনডিএ (NDA) স্বচ্ছতা: ট্যারিফ আলোচনার NDA নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে; যেহেতু বাকি দেশগুলো ইতিমধ্যে এনডিএ প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশকেও স্বচ্ছতা আনতে হবে— stakeholder inclusion বাড়াতে হবে।

মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (FTA) ও বিশেষ বাণিজ্য কাঠামো :  FTA (Free Trade Agreement) প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের দিকে উত্থাপিত হয়েছে এবং ইউরোপ-ভিত্তিক FTA-এর দৃষ্টান্তও আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি হলে: - পোশাকসহ প্রধান ৮০% রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত বা স্বল্পশুল্ক হার প্রতিষ্ঠা করা যাবে; - বিপরীতে বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট মার্কিন পণ্য ও পরিষেবাতে সহজ প্রবেশাধিকার দিতে হতে পারে; - এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশনের জন্য নতুন পথ খুলবে— যেমন আইটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিপণ্য, চিংড়ি/ফিশ প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদিতে।

চ্যালেঞ্জ: শ্রম ও পরিবেশ নীতির অগ্রগতি, আইপি আইনের সংস্কার, বাজারের অযৌক্তিক বাধা দূরীকরণ, বিদেশী বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি, কূটনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন; না হলে এফটিএ বাস্তবায়ন আটকে যেতে পারে।

WTO ও LDC সুবিধা : WTO-এর dispute settlement mechanism ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের unilateral বা discriminatory tariff-এর challenge/ প্রতিবাদ করা যায়, তবে কার্যত সময় সাপেক্ষ এবং মার্কিন সরকার একতরফা পদক্ষেপ নিতে অভ্যস্ত। WTO-এর LDC সিদ্ধান্তে 'duty-free-quota-free' সহজে পাচ্ছে EU, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যত এখনও apparel ও প্রধান পণ্য এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ পর্যন্ত LDC, WTO এবং UNCTAD ফোরামে আমেরিকান পক্ষের উপর কূটনৈতিক চাপ  অন্য দেশের মতো সুবিধা দিতে কার্যকর multilateral বার্তা’ দিতে পারে। আর, LDC–graduation period-এ extension/ phase out সময় বড় জোটের মাধ্যমে বিশেষ ডিসকাউন্ট আদায়েরও সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক মহল, লবিস্ট ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা । মার্কিন অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান বায়ার গ্রুপ, আমদানি-রপ্তানিকারক চেইন ও বিভিন্ন সিনেটর-লবিস্টদের মধ্যে যৌথভাবে বাংলাদেশ-বান্ধব ক্যাম্পেইন চালানো, যার মাধ্যমে 'sourcing diversification' মূল যুক্তি তুলে ধরা যায়। সাধারণত, বহুজাতিক কোম্পানিরা, যারা ওয়ালমার্ট, নাইকি, অ্যাডিডাস, টার্গেট, গ্যাপ— তাদের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে কোয়ালিটি এবং সোর্স ওয়াইড সংস্কারে আগ্রহী— এগুলোতে কৌশলগতভাবে জড়িত থাকা জরুরি। - ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (BGMEA, BKMEA) একযোগে হোয়াইট হাউজ, USTR, সিনেট/ কংগ্রেসের কমিটি এবং আমদানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও সরাসরি লবিং বাড়াতে পারবে— যা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড তুলনায় বাংলাদেশকে বেশি সুরক্ষা দেবে। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে দ্রুত নিয়োগ জরুরি, কারণ কয়েক দফা দেরিতে পরিষেবা নিলে অগ্রগতি বিলম্ব হয় (যেমন BGMEA-এর লবিস্ট নিয়োগ দেরি ছিল চূড়ান্ত হারে নেতিবাচক)

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পটভূমি: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা, মধ্যবর্তী নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান এবং দুর্বলতা কাটানো—একই সাথে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি ও চীনা-নিয়ন্ত্রণিত আমদানি শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসাই শুল্কনীতির মূল থিম। - আগের GSP সুবিধা ২০১৩ সালে বাংলাদেশ পোশাক খাতে শ্রম অধিকার ইস্যুতে স্থগিত হয়; সেই অজুহাতে এখনও পোশাক পণ্য GSP-এর অধীনে আসেনি, অথচ শ্রম আইনে সংস্কারের আওতা বাড়ালে ভবিষ্যতে কিছু সুবিধা ফেরত পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে নতুন প্রশাসন আসলে বা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক মন্দা দেখা দিলে, ট্যারিফ নিয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ: ১. রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান: শুল্ক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের শত শত কারখানায় অর্ডার কমে যাবে, কয়েক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি এবং শত-হাজার শ্রমিক কর্মচ্যুত হবে। ২. প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনামূলক সুবিধা: ভিয়েতনাম, চীন, ভারতকে যদি বেশি শুল্কে আটকানো হয়, বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে, কিন্তু তারা যদি নিজে ২০% বা তার কমে থাকে ও সরকার যদি প্রোম্পট নেগোশিয়েট না করতে পারে, সুবিধা পাবে না। ৩. ব্যবসা-উদ্যমের সংকট: বিশেষ করে মাঝারি ও ছোট পোশাক কারখানাগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, কারণ তাদের মার্কেট স্পেশালাইজেশন ও ভলিউম এক্সপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। ৪. পণ্য বৈচিত্র্য সংকুচিতমূখী (Export Concentration): apparel নির্ভরতা বেশি বলে শুল্ক-ঝাঁকুনি বড় অভিঘাত সৃষ্টি করবে—এমনকি কোনকালেই ডাইভারসিফায়েড ইকোনমি গড়ে না উঠলে পুরো অর্থনীতি 'external shock'–এ ভঙ্গুর থাকবে।

শিল্প সেক্টরের দৃশ্যমান প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া :  BGMEA, BKMEA’র চাপ ও অবস্থান: তারা বারবার কথা বলে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের কেস শক্তিশালী করছেন—পণ্যের গুণগত মান, সোর্স ডাইভার্সিফিকেশন, ওপরের মানের কমপ্লায়েন্স, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, শ্রমাধিকার সংরক্ষণের অঙ্গীকার ইত্যাদিকে PR ও লবিং টুল হিসেবে তুলে ধরেছেন। - জীবিকায়ন রক্ষা: সরকারী কর্মকর্তা, বিশ্লেষকরাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা– এই বাড়তি বাজারে দ্রুত প্রবেশাধিকার দরকার, পণ্যবৈচিত্র্য বাড়াতে হবে।  টেকসই ও শক্ত শিল্পনীতি: শ্রমিক কল্যাণ, স্বাস্থ্যবীমা, ডিজিটাল সোর্সিং, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন-এ অগ্রগতি রপ্তানি প্রতিযোগিতায় সহায়ক হতে পারে।

প্রতিযোগী দেশের কৌশল: ভিয়েতনাম এই আলোচনা পর্বে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি proactive ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের আমদানির উপর শুল্ক তুলে দিতে রাজি হয়; বিনিময়ে আমেরিকান পণ্যে মাত্র ০% শুল্ক, এবং গোটা supply chain-এর ট্রেসেবিলিটি নিশ্চয়তার অঙ্গীকার দেয়; বিভিন্ন FTA (TPP, EVFTA, RCEP)-এর মাধ্যমে বিকল্প মার্কেট এক্সেস ও supply chain resiliency নিশ্চিত করে; এবং রাজনৈতিকভাবে  মার্কেট ইকোনমি স্বীকৃতি চায়।

সুপারিশ : ১. অগ্রগামী কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কৌশল: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো, কিন্তু একচেটিয়া নির্ভরতার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে বিকল্প বাজারের দিকে ছড়িয়ে পড়া অন্যতম প্রধান কৌশল হওয়া উচিত। ২. আমদানি চুক্তির মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ: দরকারে মার্কিন খাদ্য, মোকন, তুলা, প্রযুক্তিপন্ন—এমন পণ্য আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং একই সাথে “উইন-উইন” বার্তা পৌঁছানো। ৩. WTO-বান্ধব নীতিতে জোর:তাত্ক্ষণিক দ্বিপাক্ষিক সমাধান না এলে বা অসম চুক্তি চাপিয়ে দিলে, WTO dispute settlement শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া। ৪. ব্যবসায়ী ও প্রাইভেট সেক্টর অংশগ্রহণ: এক্সপোর্টার লবি, বা লবিস্ট গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দ্রুত ও মূলধারার মার্কিন রাজনীতিবিদ, আমদানিকারক, স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো জরুরি। ৫. কর্মসংস্থান ও জীবিকা-সংরক্ষণের স্বার্থে ইমার্জেন্সি প্ল্যান:ছোট ও মাঝারি শিল্প (SME) ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পুনর্গঠন ও প্রশিক্ষণ উদ্যোগ গ্রহণ করা বিধেয়। ৬. বহুপাক্ষিক মুক্তবাণিজ্য আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা—বাজারের বৈচিত্র্য ও পরিসর বাড়াতে সরকারি কূটনীতি ও FTA আলোচনা জোরদার করা অপরিহার্য। ৭. আইনি সংস্কার ও অর্থনৈতিক সংস্কার: মার্কিন অভিযোগের জায়গা—নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার, পাবলিক ব্যবহার, শুল্কনীতির স্বচ্ছতা, আইপি-রক্ষা, ডিজিটাল নিরাপত্তা, আধুনিক শ্রম আইন—সংস্কারের মধ্য দিয়ে কৌশলগত সুবিধা অর্জন করতে হবে । 

বাংলাদেশী পণ্যে শুল্ক ১০%– এ নামানোর পথ সুগম করতে হলে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাণিজ্য রাজনীতি ও বিশ্ব কূটনীতির বাস্তবতায়—সহানুভূতিশীল, কৌশলগত ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।